top of page
Writer's pictureBiswabandhu Das

অলকানন্দার গঙ্গায় উত্তরণ

Updated: Aug 17, 2019


পাখির চোখে নন্দপ্রয়াগ

এইবার আমাদের ভ্রমণের মূল গন্তব্য ছিল উত্তরাখন্ডের অউলি এবং আশপাশ এলাকা। এই আশপাশ এলাকাটি যেমন বদ্রীনাথ মন্দির ছাড়িয়ে ভারতের শেষ গ্রাম মানা, অপর দিকে আপার অউলি ছাড়িয়ে কূঁয়ারীপাশের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত্য বিস্তৃত ছিল। তবে দেহরাদূন থেকে গাড়িতে অউলি এবং ফিরতি পথে অউলি থেকে হরিদ্বার আসতে এক বিরাট প্রাপ্তি একযাত্রায় পঞ্চপ্রয়াগের পাঁচটিকেই দেখতে পাওয়া।


অলকানন্দার গতিপথে প্রথম যে উল্লেখযোগ্য মিলন তার নাম বিষ্ণুপ্রয়াগ। যোশীমঠ ছাড়িয়ে বদ্রীনাথের দিকে যেতে এই বিষ্ণুপ্রয়াগেই আপনাকে অলকানন্দা পার করিয়ে দেবে এক সেতু। সেতু থেকেই খুব সুন্দর দেখতে পাবেন সবুজাভ,স্বচ্ছ, স্রোতস্বিনী অলকানন্দায় মিশছে আর এক স্রোতস্বিনী ধৌলিগঙ্গার বেশ ঘোলাটে জল। দুটি নদীর জলে রঙের পার্থক্য চোখে পরবেই। চাইলে সিড়ি ভেঙে একটু নীচে নেমে সাধুসন্ন্যাসীদের জটলা পার হয়ে চলে আসুন ধৌলিগঙ্গার উপর ঝুলন্ত সাঁকোতে- সেখান থেকে দেখে নিন কোনরকম প্রতিবন্ধকহীন বিষ্ণুপ্রয়াগের দৃশ্য।


যোশীমঠের কাছেই বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে বিষ্ণুপ্রয়াগ


অলকানন্দার যাত্রাপথে পরবর্তী আত্মাহূতি নন্দাকিনীর- উৎপত্তি নন্দপ্রয়াগ। নন্দপ্রয়াগ তার 'অগ্রজ' বিষ্ণুপ্রয়াগ এবং 'অনুজ' কর্ণপ্রয়াগের তুলনায় যেন কিছুটা নিস্প্রভ, জৌলুসহীন। কর্ণপ্রয়াগগামী মূল রাস্তাটির থেকে ডান দিকে নেমে গিয়েছে নন্দপ্রয়াগ যাওয়ার পথ। এখানে নদীর উপত্যকা যেন অনেকটাই উন্মুক্ত।


অলকানন্দার যাত্রাপথে আত্মাহূতি নন্দাকিনীর- উৎপত্তি নন্দপ্রয়াগ


পরবর্তী মিলনস্থল কর্ণপ্রয়াগ। এখানে পিন্ডারী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন পিন্ডার নদী মিলেছে ধৌলিগঙ্গা আর নন্দাকিনীকে বুকে নিয়ে চলা অলকানন্দার সাথে। মনে হয় এই প্রয়াগস্থলটি ব্যস্ততা আর জৌলুসে পাঁচটি প্রয়াগের মধ্যে দ্বিতীয়। অবশ্য এ আমার ব্যাক্তিগত মত।


কর্ণপ্রয়াগের ট্যাক্সি ও বাস স্ট্যান্ড


প্রয়াগের সামান্য আগে পিন্ডারনদীর উপর রয়েছে চওড়া সেতু। প্রয়াগের দৃশ্য এই সেতুর উপর থেকে খুব সুন্দর।


প্রয়াগের সামান্য আগে পিন্ডারনদীর উপর রয়েছে চওড়া সেতু

যাঁরা আরও কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছুক তাঁরা ঐ সেতুর প্রান্ত থেকে নেমে যাওয়া রাস্তা ধরে চললে বাম হাতে পাবেন সঙ্গমস্থলে পৌছবার সিমেন্ট বাঁধানো প্রশস্ত সিঁড়ি, যা শেষ হয়েছে জলের কিনারে।



এই কর্ণপ্রয়াগে রয়েছে শ্মশাণভূমি এবং বেশ কিছু সাধুসন্ন্যাসীদের আশ্রম।



কর্ণপ্রয়াগে রয়েছে দুইটি মন্দির যা পর্যটকদের সব সময় আকর্ষণ করে- উমাদেবী মন্দির ও কর্ণমন্দির। হিমালয় দুহিতা উমা পূজিতা হন প্রথমটিতে। পিন্ডারী নদীর উপর সেতুটির এক প্রান্তের থেকে ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠেছে সামান্য উপরে উমাদেবী মন্দিরে। ছোট্ট টিলার উপর মন্দির চত্বর থেকে নীচে সমগ্র এলাকার খুব সুন্দর দৃশ্য দেখা যাবে।



কর্ণমন্দিরটি অবস্থিত সঙ্গমস্থলের বাম দিকে নদীর খাড়া তীরের উপর। লোককথা অনুযায়ী মহাভারত চরিত্র বীর কর্ণ এখানে কঠোর তপস্যাবলে সূর্যদেবের কাছ থেকে কবচকুন্ডল লাভ করেন- তার থেকেই কর্ণপ্রয়াগ নাম। মতান্তরে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কর্ণ বধ হওয়ার পর স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাকে এইস্থানে দাহ করেন- তাই এই জায়গার নাম কর্ণপ্রয়াগ।


পাহাড়ের গায়ে কর্ণ মন্দির ও তার প্রবেশ পথ


রসনাবিলাশীদের জানিয়ে রাখি উমা প্যালেস নামটি ভুলবেন না। সুস্বাদু, রকমারী মিস্টির টানে আসতেই হবে উমাদেবী মন্দিরের নীচ বরাবর ব্যস্ত যানবাহন চলাচলের রাস্তার উপর অবস্থিত বড় দোকানটিতে। এই দোকানেই পাবেন নানান বেকারীর বিস্কুট, কেক, রুটি, চকোলেট ইত্যাদি।


উমা প্যালেস ও তার মিষ্টান্নের সম্ভার


পিন্ডারী নদীর উপর লোহার সেতুটির যে প্রান্তে উমা প্যালেস দোকানটি রয়েছে তার অপর প্রান্তে সেতু পার হলেই পাবেন "শ্রীকৃষ্ণ প্যালেস" হোটেল। ঘরের জানালায় বসে সারাদিন নদীসঙ্গম এবং সন্ধ্যায় নদীসঙ্গমে আরতি দেখবার ঠিকানা। এই হোটেলেই পাবেন ভদ্রস্থ নিরামিষ খাবার, উত্তর এবং পশ্চিম ভারতীয় স্বাদের। হোটেলের ভাড়াও যথাযথ।


হোটেল শ্রী কৃষ্ণ প্যালেস ও সেখান থেকে দেখা কর্ণপ্রয়াগের দৃশ্য


অলকানন্দার প্রবাহ ধরে পরবর্তী সঙ্গমস্থল রুদ্রপ্রয়াগ যেখানে মন্দাকিনী এসে মিশেছে অলকানন্দার সঙ্গে। এই রুদ্রপ্রয়াগের খুবই কাছে উত্তরাখন্ড সরকারের ট্যুরিস্ট বাংলো। সেখান থেকেই সঙ্গমদৃশ্য ও সন্ধ্যারতি অপূর্ব দেখা যাবে। রুদ্রপ্রয়াগও যথেস্ট জমজমাট এলাকা। সন্ধ্যারতির সময় স্থানীয় ভক্তদের ভাল সমাগম দেখেছি।সরকারী ট্যুরিস্ট বাংলোর অনতিদূরেই অবস্থিত তুলনামূলক কম ভাড়ায় থাকবার জন্য বাবা কালীকমলির যাত্রীনিবাস। এখানে ঘরলাগোয়া ঝুলবারান্দায় বসেই দেখা যাবে নদীসঙ্গম এবং সন্ধ্যারতি।


রুদ্রপ্রয়াগ ও তার চারিপাশের দৃশ্য


এখানে অবশ্য কোনরকম খাওয়া পাওয়া যায় না। এই রকমই কম ভাড়ায় থাকবার আর একটি জায়গার নাম বদ্রীনাথ কেদারনাথ যাত্রী সমাজ। এটি বাজার এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় খাওয়ার কাছেপিঠেই পেয়ে যাবেন। তবে নদীসঙ্গম দেখতে বেশ কিছু পথ হাঁটতে হবে।


বাবা কালীকমলির যাত্রীনিবাস



অলকানন্দা তার স্বীয় পরিচয় ত্যাগ করে দেবপ্রয়াগে ভাগীরথীর সঙ্গে মিলনের পর। এরপর তার পরিচয় গঙ্গা নামে। দেবপ্রয়াগ পৌছে অলকানন্দা জলসম্পদে বলীয়ান, আর ভাগীরথীও জলভারে স্ফীত। ফলে দেবপ্রয়াগ এক কথায় উদ্দাম।



এখানেও একেবারে জল পর্য্যন্ত পৌছবার সুন্দর রাস্তা ও সিঁড়ি রয়েছে। তবে বাস বা গাড়ির রাস্তা ছেড়ে বেশ কিছু সিঁড়ি ভেঙে দোকান পশারের মধ্য দিয়ে পৌছবেন ভাগীরথীর উপর পায়েচলার ঝুলন্ত সেতুতে। সেতু পার হয়ে ডানহাতের দিকে কিছুটা গিয়ে আবারও সিঁড়ি ভেঙে বেশ কিছু নীচে নেমে পৌছতে পারবেন একেবারে জলের কিনারায়।



কিন্তু সাবধান। এখানে জল খুবই খরস্রোতা। দেবপ্রয়াগে সন্ধ্যারতি খুবই আকর্ষণীয়। ভাগীরথীর ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে নদীসঙ্গমে যাওয়ার পথে আছে মনসা মন্দির, পায়ে চলা রাস্তা থেকে অনেক উপরে অবস্থিত হওয়ায় প্রচুর সিঁড়ি ভাঙতে হবে। দেবপ্রয়াগে কম খরচে মোটামুটি ভাল থাকবার জায়গা হচ্ছে বদ্রীনাথ কেদারনাথ যাত্রী সমাজের অনেক ঘর বিশিষ্ট বাড়িটি। বাড়িটি ভাগীরথীর ডান তীরে অবস্থিত। ভাগীরথীর উপর ঝুলন্ত সেতুটি পার না হয়ে আরও সামনের দিকে সিঁড়ি ভেঙে উঠে যেতে হবে। পথের প্রায় শেষ মাথায় দেখা যাবে বেশ বড় বাড়িটিকে। এই বাড়ির নদীসঙ্গমমুখো বারান্দায় বসেই দেখা যাবে দেবপ্রয়াগ, সেখানে সন্ধ্যারতি, মনসা মন্দির। তবে এখানে কোনরকম খাবার মিলবে না। আহারের জন্য যেতে হবে উপরে গাড়ি-বাসের রাস্তায়।


বদ্রীনাথ কেদারনাথ যাত্রী সমাজের অনেক ঘর বিশিষ্ট বাড়ি

Comments


bottom of page