top of page

দ্বিতীয় চিঠি

Writer's picture: Ramit SenguptaRamit Sengupta

#আন্দামানের_উড়ো_চিঠি

১৮.০৩.২০১৯ (ইঃ)

প্রিয় সবাই,

আপনাদের আগ্রহ ও ভালবাসায় আমি অভিভূত। দেখুন আমি কখনও বুঝিনি আন্দামানের এই সব টুকরো টুকরো খবরে আপনাদের এতো আগ্রহ। এখনও অবধি না আমি কোন চোখ ধাঁধানো ছবি দিয়েছি, না আমার লেখার বর্ণমালায় কোন ঝঙ্কার আছে। সাদা মাটা লিখতেও এত বানান ভুল করি, ভয় করে আমার দাদু স্বর্গীয় রঘুবির মজুমদার এই বুঝি এসে কানটা মুলে দিয়ে যাবে।

যাই হোক আর কথা না বাড়িয়ে কাজের কথায় আসি। ওখানে বেড়ানোর ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলাম কিন্তু যাকে আমি চিনি সেই ভদ্রলোক সমুদ্রে মাছ ধরতে গেছেন, তিন দিনের আগে ফিরবেন না। তো আগামী সপ্তাহের আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।

তাহলে আজকের বিষয়?


আজকের বিষয় হল “মাছে ভাতে বাঙালি”।


আমাদের এক common জামাইবাবু আছে বুঝলেন। আমাদের মানে আমি, বিশু আর সম্রাট, যেই তিন মক্কেল একসাথে হরিহর আত্মার মত ওখানে ছিলাম। সেই জামাইবাবু আসলে বিশুর collection কিন্তু আমাদের এমন ভাবে আপন করে নিয়েছিলেন যে এখন তিনি আমাদের সবার। আন্দামানে আলপিন টু এলিফেন্ট সবই তার চেনা। কোথায় মাছ ভালো, কোথায় মাংস। সামুদ্রিক মাছ, কলকাতা থেকে প্লেনে যাওয়া মিষ্টি জলের মাছ। বিছানা, বালিশ, কাজের লোক মানে এক কথায় total package। উনি পোস্ট অফিসে চাকরি করেন এখন রঙ্গত দ্বীপে পোস্টিং। বৌ আর এক মিষ্টি ছেলে নিয়ে আন্দামানেই সংসার।


গতকাল রাতে ফোন করে অনুরোধ করায় কিছু টাটকা মাছ (মানে ছবি) পাঠালেন আপনাদের জন্যে। সেগুলো আপলোড করছি।


সাদিপুর বাজার ওখানের অন্যতম বড় বাজার, আমি নিজে প্রতি রবিবার বাজারের থলি হাতে হাফ প্যান্ট, গেঞ্জি আর হাওয়াই চটি পরে যেতাম বাজার করতে। এই Uniform এর কারন আন্দামানের বৃষ্টি আর বৌয়ের মেজাজ দুটোরই কোন গ্যারান্টি নেই। আর মটর সাইকেলে ছাতা নিয়ে কি করবো? অধিকাংশ দিন আমার সঙ্গী ছিল এই জামাইবাবু বা আমাদের গাঙ্গুলি স্যার, আমার ব্যাঙ্কের আধিকারিক যিনি কিনা আমার ফ্লাটের উপরেই থাকতেন। সম্রাট আর বিশুর দায়িত্বে যথাক্রমে মুদি ও সব্জি কেনার ভার ছিল। মাছটা ছিল আমার subject। ফিরে এসে মাসের খাতায় যে যার খরচ লিখতাম এবং বিশ্বাস করুন কেউ কাউকে কোন দিন জিজ্ঞেস করিনি দামের ব্যাপারে। ওটা ছিল আমাদের তিনজনের পরিপাটি সংসার। ছোট বলে সব থেকে জঘন্য quarter টা আমাদের গছিয়েছিল, কিন্তু ঐ ছোট্ট ঘর গুলো আমরা প্রাণে ভরিয়ে রেখেছিলাম। সব বড়োরা যে যার ঘর ছেড়ে ওখানেই আসতেন আড্ডা মারতে। আন্দামানে চুরি হয় না, তাই ঘরে তালা মালার কোন ব্যাপার নেই। অনেকদিন দুপুরে খেতে এসে দেখেছি অন্য কেউ ব্যাঙ্কেরই লোক আমাদের হল ঘরের বিছানায় শুয়ে নাক ডাকছে।

যাই হোক সাদিপুর বিশাল বাজার, বিশেষ করে প্রতি রবিবার হাট বসে। আশ পাশের গ্রামের লোক অনেক দূর থেকে নিজেদের শাক, সব্জি, ডিম ইত্যাদির ভাণ্ডার নিয়ে চলে আসে বিক্রির আশায়। তাছাড়া একটা পাকা পাকি বাধানো বাজারও আছে, তবে রবিবার তার জৌলুস কম। ভারতের অন্য জায়গার মতই বঁটি নয় অনেকটা চপার জাতীয় জিনিস দিয়ে মাছ কাটত। সবই সামুদ্রিক মাছ, আমি কোনটাই চিনি না। হাতেখড়ি হোল জামাইবাবুর হাত ধরেই। কুকারি, ফার্সে, ভেটকি, সুরমাই, ডান্ডুস,মায়া, তারিনি আর কত বলবো।


1.কুকারি, ডান্ডুস 2. তারিনি, ফার্সে 3. ভেটকি, সুরমাই


ব্যাপার হচ্ছে কিনলেই তো হোল না রান্না করবো কি ভাবে? একবার আমাদের হলুদ , জিরে, ধনে গুঁড়ো দিয়ে রুইমাছের মতো করে বানালাম। বাপরে! কি বোটকা গন্ধ, মুখে দেওয়া যায় না। তাহলে কি হবে, দুবছর মাছ খাবো না? অগত্যা সেই জামাইবাবু। কি ভাবে রান্না করতে হবে তার ট্রেনিং চললো কদিন। মোদ্দা কথা অধিকাংশ মাছ একটু কষিয়ে করতে হবে। ডুবো তেল এ ভাজলেও চলবে না, মাছের মোটা তেলের গন্ধটা কমানোর জন্য একটু রসুন বা আদা লাগবেই। সব শেষে আমাদের ভাজা গুড়ো মশলা ছড়িয়ে দিন উপরে, ব্যাস ,একেবারে তোফা তোফা করে খাবেন।


তা এই ফরমুলাতে দিব্যি চলছিল, গোল বাধলো সফিয়া মাসি কে নিয়ে। ওনার আসল বাড়ি বসিরহাট, ভগবান জানে কিভাবে আন্দামান এসে পৌঁছে ছিলেন। মাসি একপ্রকার আমার মাতৃস্নেহে রান্না করে খাওয়াতেন, তার সাথে ঘরের বাকি কাজ। সে বার কি মনে হোল একটা ইলিশ কিনে আনলাম। প্লেন এ চাপা ইলিশ তার দামও মহার্ঘ। সম্রাটকে বলে গেলাম তোর তো পাশেই ব্রাঞ্চ, মাসি আসলে বলিস্ কালোজিরে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে রাঁধতে। সম্রাট বেচারা সেদিনকেই কাজে বেস্ত ছিল খেয়াল করেনি মাসি কখন এসে চলে গেছে। আগেই বলেছি ঘড়ে তালা মারা থাকে না। ব্যস! সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফিরে দেখি আমার ১০০০ টাকার সাধের ইলিশ, মাসি আচ্ছা করে আদা রসুন পেঁয়াজ বেটে খাসির মাংসের মতো রান্না করে দিয়ে গেছে। আমি তো মানে পারলে আছড়ে পরে কাঁদি, এ লজ্জা কোথায়ে রাখব। মাসির পেয়াজের প্রতি একটু বেশিই ভালোবাসা ছিলো। সে বার সম্রাটের মায়ের সামনেই শুক্তটার প্রায় দফা রফা করছিলো। কাকিমা জিবনের ঝুঁকি নিয়ে শুক্তটাকে প্রানে রক্ষা করে। শেষ মেস আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম অনেক হয়েছে, পেঁয়াজ এবার থেকে আলমারিতেই রাখবো। রোজ রান্নায়ে বরাদ্দ এক পিস বাইরে রেখে দেওয়া হবে, তাতে যা হয় হবে।


এবার আসি ছোট মাছের কথায়, মায়া এবং তারিনি আমাদের মৌড়লার পরিবর্তে চলত। শুধু ভাজা করে খেতাম কখনও চচ্চড়ি । ওখানের অগুন্তি পানশালায় চলে যান পেয়ে যাবেন। এমনকি বাঙালি হোটেল গুলতেও আগের থেকে বলে রাখলে পাবেন। ওখানে তামিল বা তেলুগু হোটেল গুলোও কিন্তু মন্দ নয়। সারা ভারতের খাবার পাওয়া যায় পোর্টব্লেয়ারে। সব জায়গার মানুষের বাস তো তাই জন্য। TSG বলে একটা রেস্তোরা আছে, ওখানে পরিবার নিয়ে যান খুব ভালো রান্না। তবে সুরমাইএর পান ফ্রাই না খেয়ে ফিরলে আপনার সাথে আড়ি।


যেদিন কষানো মাছ খেতে ইচ্ছা করছে না, ফার্সে খান। সাধারন জিরে, হলুদ, ধনে গুঁড়ো দিয়ে। সঙ্গে টম্যাটো ধনেপাতা। ওটাই একমাত্র ব্যতিক্রম যেটা আমাদের মতন পাতলা ঝোল চলে।

সামুদ্রিক চিংড়ির ভাপা বা নারকেল চিংড়ি ওসব চলবে না, সেটাও একটু মাখো মাখো না হলে কিন্তু ভালো লাগবে না। কাঁকড়া খেতে পারেন তবে এলার্জি থাকলে খাবেন না। এ ছাড়া স্কুইড, লবস্টার সব অ্যাকুইরিয়ামে সাজানো থাকে। পছন্দ করুন, দারুণ রান্না করে দেবে। সাবধানতা বজায় রাখতে সঙ্গে এলার্জির ওষুধ রাখুন। বেশি রাতে কিন্তু দোকান খোলা পাবেন না।


টুনা মাসালা ফ্রাই, কাঁকড়া, লবস্টার


এবার আশাকরি বোঝাতে পারলাম প্রথমদিন কেন বলেছিলাম, গড়পরতা মুরগি খেয়ে ফিরবেন না।

তাহলে এবার আসি,

সবাই ভালো থাকবেন, শুভরাত্রি।


আর হ্যাঁ, পরের চিঠি আগামী রবিবার।

না, মানে এখানে আমার একার সংসার তো, রান্না বান্না না করলে খাবার জোটে না, এটা বিজয়ওয়ারা আমার এতদিনের সব অভিজ্ঞতার উর্ধে। তাই কিছু মনে করবেন না প্লিজ।

টাটা, গুড নাইট।

Comments


1.jpg
About Me

Ordinary Banker who loves to click while traveling, just to preserve golden memories of the past.

Read More

Join My Mailing List
  • White Facebook Icon
Meet me on social platform
bottom of page